মোহনবাগান যখন ঐতিহাসিক আই এফ এ শিল্ড জেতে, রবীন্দ্রনাথ তখন খ্যাতির মধ্যগগনে। তার দু’বছর পরে অর্থাৎ ১৯১৩ সালে তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে রবীন্দ্রনাথের কোনও লেখায় এই শিল্ড জয়ের উল্লেখ নেই।
কয়েক বছর আগে, ‘এই সময়’ সংবাদপত্রে “দে গোল গোল” বলে একটি কবিতা ছেপেছিল। অনেকে ভেবেছিল কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের লেখা। আসলে ওটি ছিল রবীন্দ্রনাথের ‘ঝুলন’ কবিতার প্যারডি। যে কবিতার বিখ্যাত লাইন “দে দোল দোল।”
কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মতো সাহিত্যিকের লেখায় মোহনবাগান থাকবে না তা কি হতে পারে? রবীন্দ্রনাথের অন্তত তিনটি লেখায়, চারবার মোহনবাগানের উল্লেখ পাওয়া যায়। ‘দুই বোন’ উপন্যাসে দেখা যাচ্ছে, ঊর্মিমালার মনজয় করার জন্য শশাঙ্ক তাঁকে মোহনবাগানের খেলা দেখতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিচ্ছে।
রবীন্দ্রনাথের আরেকটি রচনা ‘সে।’ এই বইটিতে তিনি নানা মজার ঘটনা লিখেছিলেন, নাতনি পুপেকে খুশি করার জন্য। এই বইতে দু’বার মোহনবাগানের সন্ধান পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ একবার লিখছেন, স্মৃতিরত্নমশায় মোহনবাগানের গোলকিপারি করেছেন। আরেকবার লিখেছেন, মোহনবাগানের খেলা দেখতে গিয়ে সাড়ে তিন আনা পয়সা পকেটমারি হয়ে গেছিল। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত ‘শেষের কবিতা’র একদম শুরুতে, যেখানে স্টাইল এবং ফ্যাশনের তুলনা করা হচ্ছে, সেখানে মোহনবাগানের উল্লেখ পাওয়া যায়।
রবীন্দ্রনাথের এই সব লেখা পড়লে বোঝা যায়, আজকের মতো তখনকার দিনেও মেয়েদের মধ্যে মোহনবাগান প্রবল জনপ্রিয় ছিল। দাদু-নাতনি সকলেই মোহনবাগানের কথা শুনে খুশি হতেন। একটা জিনিস লক্ষ্য করুন, শেষের কবিতা, দুই বোন এবং সে যখন লেখা হচ্ছে, তখন ইস্টবেঙ্গল বা মহামেডানের জন্ম হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই সব ক্লাবের নাম তো রবীন্দ্রনাথের লেখায় নেই? তা হলে কি রবীন্দ্রনাথ মনে মনে মোহনবাগানকে সমর্থন করতেন?
সরাসরি সমর্থনের কোনও তথ্য পাওয়া না গেলেও, রবীন্দ্রনাথ কিন্তু মোহনবাগানের অনেক খবরাখবর রাখতেন। ১৭ এপ্রিল ২০১৬ সংবাদ প্রতিদিনে কাশীনাথ ভট্টাচার্য এমনই এক তথ্য দিয়েছেন। শান্তিনিকেতনে কবির সঙ্গে দেখা হয়েছিল গোষ্ঠ পালের। গোষ্ঠ পালের সুগঠিত শরীর দেখে তিনি বলেছিলেন, “বুঝতে পারছি কেন চীনের প্রাচীর বলা হয়।”
একা রবীন্দ্রনাথ নন, ঠাকুরবাড়ির অন্যান্য সদস্যদের মনেও মোহনবাগানের ছোঁয়া লেগেছিল। ৮ মার্চ ২০১৫ তারিখে আনন্দবাজার পত্রিকায় ‘রসের কারবারি’ নামে এক প্রবন্ধে বিখ্যাত কার্টুনিস্ট চণ্ডী লাহিড়ী জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথের ভাইপো গগনেন্দ্রনাথের কথা। গগনেন্দ্রনাথ নিজেও ছিলেন বিখ্যাত কার্টুনিস্ট। তিনি নিজের জুড়িগাড়ি হাঁকিয়ে মোহনবাগানের খেলা দেখতে মাঠে গেছিলেন। বাড়ি ফিরে তিনি তাই নিয়ে একটি কার্টুনও এঁকে ফেলেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের আরেক ভাইপো অবনীন্দ্রনাথ। তিনি ‘লম্বকর্ণ পালা’ নামে একটি নাটক লিখেছিলেন। নাটকটি ছিল রাজশেখর বসুর রচনা অবলম্বনে। সেই নাটকেও দেখা যাচ্ছে। বংশলোচনের বাড়ির সান্ধ্য আড্ডায় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এই নানা বিষয়ের মধ্যে মোহনবাগানও আছে।
দেশ জুড়ে এত ক্লাব আছে। কিন্তু আছে এমন কোনও ক্লাব, যা স্থান পেয়েছে রবি ঠাকুরের কলমে? গগন ঠাকুরের তুলিতে? অবন ঠাকুরের নাটকে?
Post Top Ad
Friday 14 December 2018
Home
Unlabelled
রবি ঠাকুরের কলমে জায়গা করে নিয়েছে একমাত্র মোহনবাগান...
রবি ঠাকুরের কলমে জায়গা করে নিয়েছে একমাত্র মোহনবাগান...
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Ad
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.
No comments:
Post a Comment