আই লিগের মিনি ডার্বিতে জিতল ইস্টবেঙ্গল। শুধু জয় নয়। মোহনবাগানকে তাদের মাঠে দুই গোলে হারাল লাল-হলুদ ব্রিগ্রেড। ম্যাচের ৪০ মিনিটে হেড থেকে গোল করেন শুভনীল ঘোষ। এরপর ম্যাচের ৫৪ মিনিটে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে দ্বিতীয় গোল করেন লালরুতকিমা। তবে শুক্রবারের ডার্বি যুদ্ধে ইস্টবেঙ্গল জিতলেও, দু’দলের সমর্থকদের মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ, মোহনবাগানের পতাকায় অশালীন মন্তব্য লিখে ফ্ল্যাগ পোড়ানোর চেষ্টার জন্য ফের একবার ময়দান কলঙ্কিত হল।
শুধু তাই নয়। পুরো ঘটনার আঁচ রঞ্জন চৌধুরীর দলের উপরেও পড়ল। একদল মোহনবাগান সমর্থকদের রোষের মুখে পরে ইস্টবেঙ্গল। ফলে তাদের পুলিশের সাহায্যে ড্রেসিংরুমে যেতে হয়। এই ন্যক্কারজনক ঘটনার রেশ অবশ্য মাঠের বাইরেও পড়েছিল। ঘোড় সওয়ার পুলিশকে উপেক্ষা করে দু’দলের সমর্থকরাই একে অন্যের দিকে তেড়ে গেলেন। ফলে এক সবুজ-মেরুন সমর্থককে মার খেতে হয়। তাঁর কপাল ফাটিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি পিঠে পর্যন্ত আঘাত করা হয়। তাই ফুটবলকে ছাপিয়ে গিয়ে দুই দলের সমর্থকদের এমন ‘আন স্পোর্টিং’ আচরণের জন্য প্রচন্ড বিরক্ত দুই দলের কোচ। লাল-হলুদের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর রঞ্জন চৌধুরী বলেন, “এটা খুবই খারাপ ঘটনা। এগুলো একেবারেই মেনে নিতে পারছি না। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র ভাষায় নিন্দা করছি। বাংলার ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাইরের রাজ্য থেকে ফুটবলার নিয়ে আসছি। কিন্তু এমন ঘটনা দিনের পর দিন ঘটলে তো অন্য রাজ্যের ফুটবলার এখানে আর খেলতেই আসবে না।” একইভাবে পুরো ঘটনার নিন্দা করলেন মোহনবাগানের কোচ জো পল আনচেরি। তিনি যোগ করেন, “এমন ঘটনা মোটেও কাম্য নয়। সমর্থকরা তাঁদের প্রিয় দলের জন্য গলা ফাটাবে সেটা খুবই ভাল ব্যাপার। কিন্তু একে অন্যকে নোংড়া ভাষায় গালাগালি দেওয়া, ফুটবলারদের আক্রমণ করা, নিজেদের মধ্যে মারপিট করাকে মেনে নেওয়া যায় না। এগুলো করলে তো দিনের শেষে দুটো ক্লাবের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এরা কি সেটা ভুলে গেল!”
মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা শুভনীলের সংসারে দারিদ্রতার ছাপ স্পষ্ট। ওর বাবা চায়ের দোকান আছে। তবুও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি ১৫ বছর বয়স থেকে ইস্টবেঙ্গলে খেলছেন শুভনীল। এদিন তাঁর গোলেই এগিয়ে যায় দল। তবুও শুভনীল এই জয়কেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। বলছেন, “আমার গোল বড় কথা নয়। দল জিতেছে এটাই বড় কথা। আই লিগের মূলপর্বে কোয়ালিফাই করার জন্য এই জয়ের খুব দরকার ছিল।”। শুভনীলের মত একইরকম খুশি মিজোরাম থেকে আসা লালরুতকিমা। তিনি বলেন,”দলকে এই জয় উৎসর্গ করলাম। তাই আমি নিজের গোল নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। কারণ দলের জয়টাই বড় কথা।”
ম্যাচের শেষে তাঁরা লাল-হলুদ সমর্থকদের উদ্দেশ্যে হাততালি দিলেন। কিন্তু ম্যাচটা আর শান্তিপূর্ণভাবে আর শেষ হল কোথায়! দুই দিকের গ্যালারিতে দাঁড়িয়ে একে অন্যের বিরুদ্ধে স্লোগান, মোহনবাগানের পতাকা পোড়ানোর চেষ্টা, তাদের ফ্ল্যাগে অশালীন মন্তব্য লেখার জন্য ঝামেলা বড় আকার ধারণ করল। ‘মিনি ডার্বি’কে কেন্দ্র করে ফের একবার কলুষিত হল ময়দান।
ইস্টবেঙ্গলের জুনিয়র দলের সদ্য প্রয়াত কোচ সুজিত চক্রবর্তীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে, ম্যাচের শুরুতে এক মিনিটের নীরবতা পালন করেছিল দুটো দল। কালো ব্যাজ পরে খেলতে নেমেছিল লাল-হলুদ ব্রিগেড। কিন্তু এই ‘মিনি ডার্বি’ ঘিরে যেভাবে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি তৈরি হয়ে উঠল, তাতে সুজিতবাবুর আত্মা যে কষ্ট পাচ্ছেন সেটা নির্ঘাত বলাই যায়।
Source by www.xtratime.in
No comments:
Post a Comment